Wednesday, September 23, 2015

যোগ্যতা ও নেতৃত্বে উজ্জ্বল সিলেটের মহিলা পুলিশ


http://bdpolice24.blogspot.com/




কবির আহমদ, সিলেট : জাতি গঠনের কারিগর হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি পাওয়া যায় নেপোলিয়ানের ঐতিহাসিক সেই উক্তিতে, তিনি বলেছিলেন ''Give me a good mother, I will give you a good nation.'' একজন শিক্ষিত মা তার সন্তানকে শিক্ষিত-আলোকিত করে সমাজে বড় করেন। ফলে যত শিক্ষিত মায়ের সংখ্যা বাড়বে তত শিক্ষিত প্রজন্ম বাড়বে। দেশ সমাজ ও রাষ্ট্র আলোকিত হবে, এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা। জাতি গঠনে নারীর এই অবদান আকাশচুম্বী হলেও এটি অনেকটাই পরোক্ষ, দীর্ঘমেয়াদী এবং সুদূরপ্রসারী। পর্দার আড়ালে থেকে জাতি গঠনের
এই নিরন্তন প্রয়াস নারী সমাজ চালিয়ে যাচ্ছেন অনন্তকাল ধরে।
এক সময় সমাজের মূলধারার চালিকা শক্তি হিসেবে নারীদের কথা কেউ কল্পনাও করতো না, ভাবতেও পারতো না। বিশেষ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রশাসনিক অফিসার, পুলিশ অফিসার, ব্যাংক-বীমা ইত্যাদি সেক্টরগুলো ছিল সমাজের মূল চালিকা শক্তি। এখনো আছে। কিন্তু আগে যেখানে এ সেক্টরগুলো পরিচালনা পুরুষের শক্ত নেতৃত্বের বিকল্প কল্পনা করা হতো না, আজ সেই চিত্র পাল্টে গেছে। নারীরা আজ প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছে তারা যেমন ভালবাসার কোমল হাতে সমাজকে সিক্ত করতে পারে, তেমনি শক্ত হাতে প্রশাসন এমনকি রাষ্ট্র যন্ত্রের যে কোন সেক্টরে পুরুষের পাশাপাশি যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ রেখেছে।
তাই তো মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,
‘‘এমনি করে হয়নি কো জয়ী, পুরুষের তরবারী
শক্তি দিয়েছে, প্রেরণা দিয়েছে, বিজয়ী লক্ষ্মী নারী''
হ্যাঁ প্রিয় পাঠক, আজকে আমার এই নিবন্ধনটি যারা নিজ নিজ যোগ্যতা অনুসারে কর্মস্থলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন দেশের ও বিদেশের মাটিতে সেই মহিলা পুলিশের সদস্যদের নিয়ে।
আমি সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের কার্যক্রম কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়ে থাকি। দীর্ঘদিনের এই পর্যবেক্ষণ শেষে আমার সাম্প্রতিক কিছু অনুভূতি পাঠকদের সাথে শেয়ার করতেই আজ কলম ধরেছি। পুলিশ প্রশাসনের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় সিলেটের অনেক শৌর্য-বীর্যের অধিকারী পুরুষ অফিসারকে দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। তাদের অনেকেই বিভাগীয় নগরী সিলেটে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নিজ নিজ পেশাগত ক্যারিয়ারে অনেক সাফল্যের পালক সংযোজন করেছেন। আবার অনেকেই ব্যর্থতা ও নিন্দাবাদের বদনাম কুড়িয়ে আধ্যাত্মিক নগরী নামে খ্যাত পুন্যভূমি সিলেট থেকে বিদায় হয়েছে। সিলেটের পুলিশ প্রশাসনের পদস্ত কর্মকর্তা থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত এত বিপুল সংখ্যক মহিলা পুলিশ তাদের মনোবল ও দক্ষতা দিয়ে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালনের রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন অতি সম্প্রতি।
পুণ্যভূমি সিলেটে মহিলা পুলিশের নানাবিধ সাফল্য আজ সিলেটের পুলিশ বিভাগের মুখকে আলোকিত করছে, এমন মত সংশ্লিষ্টদের। সিলেটের মেয়েরা পুলিশ বাহিনীতে ভর্তি হয়ে বর্তমানে জাতিসংঘের অধীনে হাইতিতে কাজ করছে। এ গর্ব সিলেটবাসীর এ গর্ব দেশবাসীর। এসএমপি'র মহিলা পুলিশের একটি চৌকস দল সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে হাউজ গার্ড সালামী প্রদান করেছে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া, সিলেটের জেলা প্রশাসক আবু সৈয়দ মোহাম্মদ হাশিম, এসএমপি'র ডেপুটি পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অর্থমন্ত্রী মহিলা পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, আমাদের দেশের মহিলা পুলিশরা শুধু বাংলাদেশের অপরাধীদের পাকড়াও করছে না, বিদেশের মাটিতেও তারা সুজলা-সুফলা বাংলাদেশের মান মর্যাদাকে বৃদ্ধি করছে। মন্ত্রী আরো বলেন, হাইতির মতো বিধ্বস্ত একটি জনপদে বাংলাদেশের পুরুষ পুলিশ সদস্যদের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে মহিলা পুলিশরা কাজ করছে। যা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ইতিহাসে এটিই বোধহয় প্রথম রেকর্ড। শুধুমাত্র মহিলা পুলিশের দল ক্যাবিনেট মন্ত্রীকে হাউজ গার্ড সালামী প্রদানের ধারা সূচিত হলো সিলেট থেকে। আর এটা শুরু করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন সিলেটের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ূয়া। সিলেট মেট্টোপলিটন পুলিশের অন্তর্ভূক্ত একটি অন্যতম থানা হচ্ছে দক্ষিণ সুরমা থানা। এ থানার সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন সিলেটেরই সন্তান ফাল্গুনী পুরকায়স্থ। একটি বিশাল থানার আইন-শৃক্মখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তার কৌশলী ভূমিকার প্রশংসা শুনা যায় মুখে মুখে।
এসএমপির আরেক Polite, Efficient, চৌকস ও মেধাবী, কর্তব্যপরায়ণ ও বিচক্ষণ সহকারী পুলিশ কমিশনার বীনা দাশ। তিনি বৃহত্তর সিলেটেরই আলোকিত সন্তান। একই সঙ্গে সহকারী কমিশনার ফোর্স, ডিবি ও ক্রাইমের দায়িত্বগুলো অত্যন্ত দক্ষতা, বিচক্ষণতা ও সুনামের সাথে পালন করে যাচ্ছেন। ইতিপূর্বে তিনি কোতোয়ালী মডেল থানার সহকারী পুলিশ কমিশনারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। কোতোয়ালী থানায় তার সংক্ষিপ্ত দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে এ থানার দু'টি চাঞ্চল্যকর ছিনতাই মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়। নগরীর ত্রাস বদরুল, রাজু, ঢাকাইয়া রিপনসহ ১০ জন চিহ্নিত অপরাধীকে পাকড়াও করতে কোতোয়ালী পুলিশ সক্ষম হয় এসি বীণা দাশের সাহসী নেতৃত্বে। এক ট্রাক ভারতীয় বিড়ি ও দেশীয় রিভলবার ও ৫টি চোরাই মোটর সাইকেল কোতোয়ালী পুলিশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এসব সাফল্যের নেপথ্যে যার দুরদর্শী নেতৃত্ব কোতোয়ালী পুলিশকে প্রাণিত করেছে তিনি হলেন সহকারী পুলিশ কমিশনার বীণা দাশ। এছাড়া এসএমপির Detective branch সহকারী পুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পাওয়ার পর নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ৬টি মাদক হাটে সফল অভিযান, এয়ারপোর্ট রোডের সাঈদ মটরস থেকে চোরাই মাইক্রোবাস উদ্ধার, নগরীর বিভিন্ন দোকান থেকে অশ্লিল সিডি উদ্ধার ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা, কাজীরবাজার এবং পীরের বাজার এলাকায় জুয়ার হাটের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। ফিরে এসেছে সেসব এলাকায় শান্তি ও স্বস্তি।
সহকারী পুলিশ কমিশনার বীণা দাশ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে শান্তি রক্ষায় হয়তো অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের সুযোগ পাবেন, কিন্তু নগরীর বিভিন্ন স্থানে মাদক ও জুয়ার হাটের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে শান্তিকামী মানুষের প্রাণখোলা দোয়া তার আগামী দিনের উন্নতির পথে প্রাথেয় হয়ে থাকবে আজীবন আমৃত্যু। শুধু বীণা দাশ কিংবা ফাল্গুনী পুরকায়স্থ নয় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের দু'টি থানায় চারজন সাব ইন্সপেক্টর, চারজন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর এবং ৩৩ জন কনস্টেবল রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ূয়া দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, আমরা মহিলা পুলিশদেরকে মহিলা হিসেবে বিবেচনা করি না। তারা পুলিশ এটাই তাদের পরিচয়। এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে তাদের কর্মনিষ্ঠা, যোগ্যতা, দক্ষতা এবং সাফল্য কোন অংশে পুরুষ পুলিশের চেয়ে কম নয়। তাদের এ অগ্রযাত্রা এসএমপি'র জন্য এমনকি গোটা পুলিশ বিভাগের জন্য আনন্দের।

No comments:

Post a Comment